উন্মাদ এক্সিবিশন কার্টুন ২০১৮
এ বছরের মাঝা মাঝি ৫ থেকে ৯ জুলাই হয়ে গেলো উন্মাদের ৪০ বছর পূর্তি প্রদর্শনী।হাজারো উন্মাদ প্রেমিক আর শতাধিক কার্টুন আঁকিয়েদের ভিড়ে উন্মাদ হাতে বেড়ে ওঠা যেকোন তরুনের মতই ঐ ৪ টা দিন ছিল আমাদের কাছে স্বপ্নের মত।
উন্মাদের সাথে আমার প্রদর্শনী্র শুরুটা ছিল ২০০৮ সালের ত্রিশবছর পূর্তী প্রদর্শনীতে।
তাই আরো দশ বছর পার করে এসে উন্মাদের এই ৪০ -এ প্রদর্শনীটি আমার জন্য ছিল একটু বেশীই বৈশিষ্ট পূর্ন ও আবেগঘন। (ইইইইই কান্না)

একদিকে এ কয়বছরে নিজের কার্টুন আঁকার কলমের ধার কেমন বেড়েছে আর আইডিয়া করার মাথাটা কেমন পেকেছে সেটা সবার সামনে দেখানোর জন্যে ভেতর ভেতর যেমন ছিল একটা চাপা উত্তেজনা অন্যদিকে নিজেদের এক্সিবিশন বলে কথা, ফ্রেমিং থেকে শুরু করে পাব্লিসিটি- নতুন কার্টুনিস্টদের ওয়ার্কশপ নেয়া, কিউরেশন সব নিয়ে যেন সবার পাগল পাগল অবস্থা।
তিন মাস আগে থেকে হাবীব ভাই তাগাদা দিলেও সব কাজ শেষ করে শেষ পর্যন্ত কার্টুন করার জন্য হাতে সময় পেয়েছিলাম ৪ দিন! প্রদর্শনির জন্য প্রথমে কার্টুনের আইডিয়া করেছিলাম প্রায় ৩০ টা। তার থেকে পরে ফাইনাল করেছিলাম ১১ টা।আর প্রত্যেকটা কার্টুনের পেছনে ছিল উন্মাদের কোন না কোন ফিলোসফি। প্রদর্শনীর পর এতদিন আলসেমী করে সোস্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হয়নি কার্টুন গুলা। তাই বছরের শেষ দিনে এসে ভাবলাম যারা দেখেননি বা আবার দেখতে চান তাদের সাথে এখানে শেয়ার করি।
১।

উন্মাদ যখন থেকে পড়া শুরু করি তখন থেকে মাথায় শুধু ঘুরতো আইডিয়া। তারপর কলেজে উঠলাম, ইউনিভার্সিটিতে উঠলাম, চাকরিতে ঢুকলাম এখনো ব্যাপারটা সেম।শুধু কার্টুনের আইডিয়া না, দৈনদ্দিন জীবনের নিত্ত নতুন সব আইডিয়া।
শুধু ইউনিভার্সিটির পর থেকে দেখলাম আস্তে আস্তে আশেপাশের মানুষ গুলা কেমন জানি আইডিয়া থেকে সরে গিয়ে দিন রাত টাকার চিন্তায় পরে রইলো।
আসলে উন্মাদ যারা পরে তাদের মাথায় আইডিয়ার পোকাটা রয়েই যায়। আর আইডিয়া নিয়ে যারা কাজ করে, নতুন ভাবে যারা ভাবতে পারে তা সে যেই সেক্টরেই হোক, সাফল্য তো তাদের আসেই।
২।

আপনি যে বয়সেই উন্মাদ পড়েন না কেন উন্মাদ মানুষের ভেতরের শিশু স্বত্বাটাকে( নাক কিশোর স্বত্বা?) জাগিয়ে তোলে।
উন্মাদ সম্পর্কে একবার আমাদের উন্মাদের একজন বলেছিলেনঃ উন্মাদ হচ্ছে বয়সন্ধি কালের মত তাই সবা্র একবার না একবার এটার ভেতর দিয়ে যেতেই হয়!
৩।

উন্মাদ একটি সংক্রামক রোগের নাম। যেই পরিবারে একবার কেনা হয়েছে সেই পরিবার জানে। একজনের হাতে পত্রিকাটা কোনদিন থেমে থাকেনাই। :D
৪।

হার্ডকোর উন্মাদ ফ্যানদেরকে কখনো খুব একটা সুস্থ বলে গন্য করা হয় না। এই কার্টুনটা যারা এক্সিবিশন দেখতে এসেছিলেন- আপামর জনগন তাদের উদ্দেশ্য করে করা।হার্ডকোর উন্মাদ ফ্যান না হোলেও ই এক্সিবিশন যেহেতু আপনি দেখতে এসেছেন তাই আপনাকে পুরাপুরি সুস্থও বলা যাচ্ছে না। সেট A ,সেট B আর মাঝামাঝি? আপনি!
৫।

এই কার্টুন টা যদি বিশ্লেষন করতে হয় তাহলে এইটা কোন কার্টুন হয় নাই। ইনফ্যাক্ট আগের কোন কার্টুনই যদি বিশ্লেষন করতে হয় তাহলে কোন টাই কোন কার্টুন হয় নাই। :/ এখন নিজেকে বোকা বোকা মনে হচ্ছে। তাই নিজের কার্টুন বিশ্লেষন বাদ দিয়ে কার্টুনের ফাঁকে ফাঁকে অন্য একটা গল্পে গেলাম। (আর কোনটা না বুঝলে কমেন্ট করতে পারেন -_- )
৬।

উন্মাদের সাথে আমার প্রথম প্রদর্শনী ছিল ২০০৮ এর ত্রিশবছর পূর্তীতে!
মনে পরে উন্মাদ অফিসে বসে আছি , লাস্ট মিনিট ফ্রেমিং আর কার্টুন আঁকাআঁকি চলছে। বস বললেন কার্টুন আঁকো, প্রদর্শনীতে দেয়া হবে। শুনেতো আমি যারপর নাই উত্তেজিত!
কিন্তু উত্তেজিত হলে কি হবে কার্টুন আঁকার আইডিয়া তো পাই না। এদিকে একেরপর এক ফ্রেম অন্য কার্টুনিস্টদের আঁকায় ভরে যাচ্ছে। আমি মুখ কাঁচু মাচু করে এক কোনায় বসে আছি আর আড় চোখে গুনছি কয়টা ফ্রেম বাকি আছে ।
এমন করে ফ্রেমের সংখ্যা যখন শেষের দিকে তখন বস একটা আইডিয়া দিয়ে বললেন এটা আঁকোতো…
৭।

আমি তখন যেন নদীর কুল খুজে পেয়েছি! তাও কি একটা অবস্থা, আঁকতে পারি তো রং করতে পারি না, সবার সাহায্য নিয়ে দুইটা কার্টুন শেষ করলাম কোনমতে।
এক্সিবিশনের দিন, প্রচুর উন্মাদপ্রেমীতে ভরে আছে দ্রিক গ্যালারী।
হাবীব ভাই কার্টুনিস্ট বলে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন সবার সাথে।
৮।

এই নতুন পাওয়া পরিচয় নিয়ে আমি তখন হতবাক, আপ্লূত ও থতমত! এই মিশ্র আবেগ নিয়ে কি করবো বুঝতে পারছি না এমন সময় হাবীব ভাই পাশ থেকে বলে গেলেন, ফেইক ইট টিল ইউ মেইক ইট!
কথাটার মর্ম তখন না বুঝলেও বুঝেছিলাম অনেক পরে গিয়ে ।
কাজ করার পাশাপাশি আত্মবিশ্বাস ও ইতিবাচক মনমানসিকতা জীবনে লক্ষ অর্জনে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
আশ্চর্য হলেও সত্যি আজ পর্যন্ত কার্টুন নিয়ে যত বড় বড় চ্যালেঞ্জের মুখো মুখি হয়েছি, সব যায়গার এই কথাটাই কাজে দিয়েছে।
৯।

১০।

১১। ও সব শেষেঃ












