২০১২ সালে একবার সিলেট যাচ্ছিলাম একটা আর্ট প্রজেক্টে, রিজেন্ট এয়ারওয়েজে চড়ে। প্লেনে ওঠার পর বসে আছি, অপেক্ষা করছি, কিন্তু প্লেন ছাড়ে না। কোন এক ভি আই পির জন্য আমরা অপেক্ষারত। প্রায় ১৫ মিনিট পর ভি আই পি এলেন, এসে ঠিক গেটের সামনে আমার মুখ বরাবর সিটে চেপে বসলেন। (আমাকে যথা সম্ভবত এয়ার হোস্টেসের সিটে বসতে দেয়া হয়েছিল!) তো যাই হোক ভি আই পি দেখে তো আমার চোখ ছানা বড়া! যে সে ভিআইপি নয়, স্বয়ং মানণীয় অর্থমন্ত্রি আবুল মাল আব্দুল মুহিত!
তাকে দেখে আমার এত আগ্রহি হবার কারন হল তখন আমি ডেইলি সান পত্রিকায় এডিটোরিয়াল কার্টুনিস্টের চাকরি করি। সেসময় খবরে কাগজে সপ্তাহে- দুসপ্তাহে অন্তত একদিন হলেও আমার মুহিত সাহেবের কার্টুন আঁকতে হয়। তাই সামনা সামনি ক্যারেকটার স্টাডি করার এমন সুযোগ আমার মত নব্য কার্টুনিস্টের জন্য তখন পরম সৌভাগ্য!
কিন্তু সে সুযোগ আর হচ্ছে কই! তিনি আমার এত কাছাকাছি বসা যে তার চোখের দিকে তাকিয়ে খসখস করে খেরো খাতায় স্কেচ করে নেয়া আমার সাহসে কুলাচ্ছিল না।তবুও সাহস করে সাইড ব্যাগ থেকে স্কেচবুকটা বের করার চেষ্টা করছি, তখনই খেয়াল করলাম তার পাশে বসা বডিগার্ড সন্দেহের দৃষ্টিতে আমার দিকে কটমট করে তাকিয়ে আছে। তবে কিছুক্ষন পর প্লেন আকাশে উড়তেই তাঁরা নাক ডেকে ঘুমিয়ে পরলেন আর আমার আঁকাআঁকির কূকির্তীর জন্য একটা দারুন সুযোগ তৈরি হল।
আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে জানতে পারলাম গতকাল রাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছেন সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। খবরে নিউজটা দেখে তাঁকে নিয়ে অর্থাৎ তার কার্টুন আঁকা নিয়ে অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল।
২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত যতদিন তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন, ঠিক ততদিন আমিও দেশের একাধিক দৈনিকে রাজনৈতিক কার্টুনিস্ট ছিলাম। তার কত ঘটনার সাক্ষী স্বরূপ কত কার্টুন করেছি, বিশেষ করে সব চেয়ে বেশী চাপ আসতো প্রতি বছর বাজেট অধিবেশনের দিনে।কারন বছর ঘুরে বাজেটের মত কঠিন জিনিস কে সহজ ভাবে তুলে ধরার জন্য কার্টুনের বিকল্প নেই।
একদিকে পত্রিকা অফিসে চলতো বাজেট উপলক্ষে খাওয়া দাওয়া, আরেক দিকে চলতো আমার কার্টুন। এডিটরের কড়া নির্দেশ থাকতো, মুহিত সাহেব কে নিয়ে একটা কার্টুন অবশ্যই চাই!
বিভিন্ন সময় তাকে নিয়ে আমার করা প্রকাশিত কার্টুন গুলোর কিছু নিচে শেয়ার করছি:
Most high flying maneuver in political entertainment!
My take on budget 2017–18
তাঁকে নিয়ে প্রশংসা করা আমার সাজে না। কারন কার্টুনিস্টদের কাজ রাজনীতিবিদদের প্রশংসা নয় বরং সমালোচনা করা। তবে পরিশেষে এইটুকু বলতে পারি যে দুই টার্ম, দীর্ঘ নয় বছর তিনি অর্থমন্ত্রী ছিলেন, সেসময় তাকে নিয়ে দেশের সব পত্রিকায় কার্টুন বের হয়েছে। আমরা কার্টুনে নিয়মিত তাকে নিয়ে হাসি ঠাট্টা করেছি, ক্যারিক্যাচার করেছি। তবে সে কারনে আমাদের কখনো কোন ঝামেলায় বা চাপে পড়তে হয়নি।
দীর্ঘ এক ক্যারিয়ারের পাশাপাশি, দীর্ঘ এক জীবনের সমাপ্তি ঘটলো।
যেখানেই থাকবেন, ভালো থাকবেন!